এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা ডাক্তার-নার্সরাই করছেন: তাসকিন আহমেদ

সোমবার, ৪ মে ২০২০, বিকাল ০৫:২৮


করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির পাশাপাশি জীবনের চাকাও থেমে গেছে। থমকে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। কর্মমুখো মানুষ হয়ে পড়েছেন গৃহবন্দি। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া সবচেয়ে কষ্টে রয়েছেন নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দৈনিক রাজনীতি'র সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ। দেশের গতিময় এই পেস বোলারের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এসএম আফজাল।

রাজনীতি: করোনার সংক্রমণ এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ঘরে থাকার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ত্ব বজায় রাখতে। এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলুন।

তাসকিন আহমেদ: আমরা প্রত্যেকেই জানি এই মুহূর্তে কী করতে হবে বা কী করা উচিত। সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ঘরে থাকার পাশাপাশ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে আমাদের উচিত তা মেনে চলা। আমরা যারা সচেতন নাগরিক আছি তাদের প্রত্যেকের উচিত নিজে ফলো করার পাশাপাশি অন্যকে উৎসাহিত করা।

যদিও দীর্ঘদিন ধরে ঘরে থাকাটা কষ্টকর, তারপরও কিছু করার নেই। পরিস্থিতি যা তাতে এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ এখনও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বের হয়নি। যতদিন না প্রতিষেধক বের হবে ততদিন ঘরে থাকাই ভালো। এতে আমি নিজে নিরাপদ থাকার পাশাপাশি পরিবারকে ছোঁয়াছে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারব।

আমরা যদি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হই তাহলে আন্তত ছোঁয়াছে ভাইরাসের সংক্রমন থেকে আমি রক্ষা পাব আর অন্যকেও রক্ষা করতে পাব। কারণ আমার মাধ্যমেও তো অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন!

রাজনীতি: করোনায় স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। বন্ধ হয়ে গেছে সব কলকারখান ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। সবচেয়ে কষ্টে রয়েছেন নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ। তাদের সহযোগিতায় সামর্থবানদের উদ্দেশে কী পরামর্শ দেবেন?

তাসকিন আহমেদ: আমাদের যাদের সামর্থ আছে, তাদের উচিত অসহায় মানুষের সাহায্য করা। আমাদের আশপাশে নিম্নমধ্যবিত্ত অনেক পরিবার আছে, যারা মানুষের কাছে চাইতে লজ্জা পায় অথচ খুবই কষ্টে রয়েছে। আমাদের উচিত তাদের হেল্প করা। আমি মনে করি ঢোল না পিটিয়ে, গোপনে দান করা উচিত। এখনই সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, তাদের  দুঃখ, কষ্ট ভোলানোর।

রাজনীতি: করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই ভিন্ন চোখে দেখছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছেন না। আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলেও প্রতিবেশীরা জানাযায়ও অংশ নিচ্ছেন না। এ ব্যাপারে যদি কিছু বলেন।

তাসকিন আহমেদ: আমরা আসলে এতটা অমানবিক কখনও ছিলাম না। পরিস্থিতি আমাদের এই অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে আমাদের এখনও এতটা স্পষ্ট ধারনা হয়নি। যে কারণে অনেকেই মনে করছেন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি বা মৃত ব্যক্তির কাছে গেলে আমিও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি। এই ভয়ে অনেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘৃণার চোখে দেখছেন।

কিন্তু আসলে এটা তো তার কোনো দোষ নয়, এটা একটা রোগ। মানুষ হিসেবে সে কোনো অপরাধ করেনি। কাজেই তাকে ঘৃণার চোখে দেখার কোনো কারণ নেই, পরিস্থিতির শিকার। আশা করছি এ সমস্যা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।

রাজনীতি: করোনার ভ্যাকসিন এখনও বের হয়নি, আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের নিয়ে কিছু বলুন।

তাসকিন আহমেদ: এই মুহূর্তে আসলে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা তো ডাক্তাররাই করছেন। তারাই আসলে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা। তাদের জন্য আমদের দোয়া থাকবে, আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ রাখেন। এই মুহূর্তে ঘরে থাকার মাধ্যমে আমরা ডাক্তারদের হেল্প করতে পারি।

রাজনীতিঃ খেলোয়াড় হিসেবে এখন আপনাদের মাঠে থাকার কথা ছিল। পরিস্থিতির কারণে ঘরবন্দি হয়ে আছেন। এখন ফিটনেস ধরে রাখা কতোটা চ্যালেঞ্জিং?

তাসকিন আহমেদ: খেলা থাকলে ফিটনেস নিয়ে টেনশন হয় না। খেলা না থাকায় খুবই চিন্তায় আছি। তবে ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিওরা আমাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। ফিটনেস ঠিক রাখার বিভিন্ন কৌশল বাতলে দিচ্ছেন, সেগুলো ফলো করছি। এই আরি কি।

রাজনীতি: বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পুরো বিশ্বে আর্থিক সংকট দেখা দেবে। আপনার কি মনে হয়?

তাসকিন আহমেদ: অসম্ভব কিছু না! দেখেন, দেশের সব গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরি, শপিংমল বন্ধ। তার মানে আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আর্থিক মন্দা তো দেখা দিবেই! এখন আমাদের সামনে একটাই উপায় আছে আল্লাহকে বেশি বেশি ডাকা। নামাজ পড়া, কোরআন পড়া। আল্লাহ যেন আমাদের দ্রুত এই মহামারী থেকে রক্ষা করেন।

রাজনীতিঃ সাধারণ মানুষতো তারকাদের ফলো করে থাকেন। এ মুহূর্তে আপনি কি করছেন, ভক্তদের কি পরামর্শ দেবেন?

তাসকিন আহমেদ: আমি আসলে গত একটা মাস ধরেই ঘরে আছি। প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছি না। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি। আপনারাও তাই করেন, নিশ্চিই ঘরে থাকা কষ্টকর। কিন্তু কিছু করার নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তাই করুণ।

রাজনীতি: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

তাসকিন আহমেদ: আপনিও ভালো থাকবেন, যতটা সম্ভব সেভে থাকবেন। আপনাদের তো সংবাদ সংগ্রহ করতে অনেক জায়গায় যেতে হয়, তাই না!। চেষ্টা করবেন করোনামুক্ত থাকতে, আল্লাহ হাফেজ।

রাজনীতি/মনির

এমএসি/আরএইচ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়

Link copied