ডায়াবেটিস নিয়ে ৭টি ভুল

শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, দুপুর ০৩:৫০


আমাদের সমাজে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে আসলেই অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকেই ভাবেন, এটি ছোঁয়াচে রোগ। যেমন, স্ত্রীর ডায়াবেটিস থাকলে অনেক স্বামী মনে করেন তারও এটি হবে। ১. সত্যি বলতে ডায়াবেটিস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায় না। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে হয়ত ভাইরাস আপনার বিটা সেল ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু এই ভাইরাস ডায়াবেটিস রোগ বহন করে না বা ছড়ায় না। ডায়াবেটিস মূলত জেনেটিক্স বা পরিবেশগত উপাদানের ওপর নির্ভর করে। ২. অনেকে মনে করেন, ইনসুলিন হলো ডায়াবেটিস রোগের সর্বশেষ চিকিৎসা। এটি একবার ব্যর্থ হলে রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভব না। এটি ভুল ধারণা। এমন অনেক রোগী আছেন যারা আগে ইনসুলিন নিতেন, এখন ইনসুলিনের প্রয়োজন হচ্ছে না। তাদের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধই যথেষ্ট। বড় কথা, ইনসুলিন কখনো ফেইল করে না বা ব্যর্থ হয় না। ৩. অনেকে মনে করেন, আমার ডায়াবেটিস হয়েছে, মানে আমার সেক্সুয়াল লাইফ শেষ। ডায়াবেটিসের কারণে সেক্সুয়াল সাইটগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একটি মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। ৪. অনেকে মনে করেন, ডায়াবেটিসের ওষুধ অনেক দিন খেলে সেটি শরীরে নানা ধরনের ক্ষতি করে। এজন্য অনেকেই মাঝে মাঝে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। অনেকে আবার বিভিন্ন গাছের পাতা, শেকড়-বাকড় খেয়ে থাকেন। আসলে ওষুধে তো গাছপালার কেমিক্যালই ব্যবহার করা হয় এবং এটি হিসাব করে বৈজ্ঞানিকভাবে যতটুকু দরকার ততটুকু যুক্ত করা হয়। কিন্তু সরাসরি গাছের পাতা, শেকড়-বাকড় খেলে তো ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। সহজে বললে, রাজশাহীর ল্যাংড়া আম এবং ঢাকার ল্যাংড়া আমের স্বাদ কখনো এক হবে না। তেমনি কেমিক্যাল কম্পোজিশনও একটু ভিন্ন। ৫. আবার আম কচি অবস্থায় গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে, পরিপক্ব হলে বাড়ে। গাছের পাতায় কেমিক্যাল কম্পোজিশন একেক জায়গায় একেক রকম। পাতা কচি হলে এক রকম; বয়স্ক হলে আরেক রকম। এতে সুগার লেভেল অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা (ফ্লাকচ্যুয়েট) করে। সুগার ওঠা-নামা করলে জটিলতা বেশি করে দেখা দেয়। সুতরাং এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ৬. আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে, কম বয়সী মেয়েদের ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তার নাকি বিয়ে হয় না, কেউ বিয়ে করতে চায় না। কারণ, ডায়াবেটিস থাকলে নাকি সন্তান হবে না। এগুলো খুবই ভুল ধারণা। আপনারা ইউটিউবে শিলা ধরের ভিডিও দেখতে পারেন। এক বছর বয়সে তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে এবং এ ঘটনার কিছুদিন আগেই ইনসুলিন আবিষ্কার হয়েছে। শিলা ধরের মা তখন থেকেই তাকে ইনসুলিন দেয়া শুরু করেন। ২০১২ সালে ৮১ বছর বয়সে শিলা ধর সাক্ষাৎকার দেন এবং বলেছেন— তিনি বিয়ে করেছেন, বাচ্চাও আছে। তিনি কখনোই তার ডায়াবেটিসকে অনিয়ন্ত্রিত হতে দেননি এবং সুস্থ ছিলেন। ২০১২ সালেই শিলা ধর স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন এবং জীবনের শেষ সময় পর্যন্তও সুস্থ-স্বাভাবিক এবং অ্যাকটিভ লাইফ লিড করে গেছেন। আবার ডায়াবেটিসের বেশ কিছু রোগী আছেন যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অ্যাথলেট এমনকি অলিম্পিক আসরে প্রতিযোগিতা করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ৭. মনে রাখবেন, চোখের সমস্যা হলে যেমন সব সময় চশমা পরে থাকতে হয় এবং চশমার সাহায্যে রোগী সবকিছু ঠিকমতো দেখতে পারেন ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। ডায়াবেটিসও তেমনি অসুখ। আপনি নিয়মিত ওষুধ খেলে, হাঁটাহাঁটি করলে, সুষম খাদ্য খেলে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়েও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন। সুতরাং, আপনারা যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের এসব ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ডায়াবেটিসকে ভয় না পেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রাজনীতি/হিই

এমএসি/আরএইচ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়

Link copied