বঙ্গবন্ধুর নামে আইনাঙ্গনেও ভূঁইফোড় সংগঠন এক সংগঠনের ৪ কমিটি

রাজনীতি ডেস্ক

শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১, দুপুর ০১:০৯


এমনিতেই ভূঁইফোড় সংগঠন নিয়ে বিব্রত বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে আইনাঙ্গনে ' বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ' নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। এরই মধ্যে এ ভূঁফোড় সংগঠনেরও রয়েছে ৪ টি কেন্দ্রীয় কমিটি। সংগঠনটির কিছু বিতর্কিত কর্মকান্ড এর মধ্যে আইনাঙ্গনে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য কিছু বিতর্কিত ঘটণারও জন্ম দেয় সংগঠনটির কিছু সদস্য।

 

জানা যায়, ২০১৭ সালে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের দুই সংগঠনকে এক করে ঐক্যের লক্ষ্যে 'বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ' নামে নতুন সংগঠন করা হয়। ওইসময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্যানেল পরাজিত হয়। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের দুটি সংগঠনের দ্বন্দ্বের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন। এ জন্য ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠকে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এবং আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের দুটি সংগঠনকে একটি সংগঠনে রূপান্তরিত করা হয়। নতুন নাম দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’। ২০১৭ সালের মে মাসে নতুন সংগঠনের নাম ও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের নিয়ে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন ওবায়দুল কাদের। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়েছে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে। আর সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস। সেসময় থেকে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের একটাই সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। এর বাহিরে যেসব সংগঠন বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামী বা লীগ শব্দ ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে সবগুলোই ভূঁইফোড় সংগঠন। তেমনই এক ভূঁইফোড় সংগঠন বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ। বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে গড়ে ওঠা এ ভূঁইফোড় সংগঠনের রয়েছে ৪ টি কেন্দ্রীয় কমিটি।

এ সংগঠনের ৮ জন কেন্দ্রীয় সভাপতি সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। এরা হলেন ১/মো. সেলিমুর রহমান-মশিউর রহমান মোল্লা, ২/ নোমান হোসাইন তালুকদার- বিকাশ মজুমদার ৩/ শহীদুল ইসলাম টিটু- জিয়াউল হক ও ৪/ মনির হোসেন- মাইনুল ইসলাম। এ আটজন বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের সভাপতি সম্পাদক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি সম্পাদক পরিচয় দিয়ে করে যাচ্ছেন চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম। এছাড়াও বিভিন্ন ল' কলেজ, মহানগর, জেলা ও উপজেলা কমিটিতে পদ পাইয়ে দেয়ার নাম করে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। ভূঁইফোড় সংগঠন বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদেন এহেন বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে আইনাঙ্গনে আওয়ামীপন্থী প্রবীন, নবীন ও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামীপন্থী এক আইনজীবী বলেন যারা এসব ভূঁইফোড় সংগঠনের নেতা পরিচয় দেয় তারা কখনো আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হতে পারেনা। তারা স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামী সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য বিএনপি জামায়াত তাদের এজেন্টদের ব্যবহার করে এসব ভূইফোড় সংগঠন গঠন করে। এদের কারনে দল ও নেত্রীর সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে তাই দ্রুত এসব সংগঠন ও সংগঠনের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ কেন গঠন করা হয়েছে এবং কে করেছে এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির এক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নোমান হোসাইন জানান, এ সংগঠনটি অনেক বছর আগ থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটি ভূঁইফোড় সংগঠন কি না তা আমার জানা নেই। একই সংগঠনের ৪ কমিটি কেন? এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর দেননি নোমান। তবে তার সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিকাশ মজুমদার বলেন, আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যদি সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করতে বলেন তাহলে আমরা তা স্থগিত করে দিব। সভাপতি সম্পাদক পরিচয়দানকারী অন্য তিন কমিটির সভাপতি সম্পাদকের সুঠোফোনে কল দেয়া হলে তারা রিসিভ করেন নি ভূঁইফোড় এ সংগঠন কিভাবে চলে ও কারা এ সংগঠনকে সহযোগীতা করছেন এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আ'লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জগলুল হায়দার জানান, আওয়ামী লীগ আইনজীবীদের একটাই সংগঠন তা হল বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এর বাহিরে যা আছেন সবই অবৈধ ও ভূয়া সংগঠন। এসব সংগঠন যারা গঠন করেন এবং যারা সহযোগীতা করেন দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসব ভূঁইফোড় সংগঠনের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জানান, বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের নামে কোন সংগঠন নেই। এটি ভূঁইফোড় সংগঠন। আমরা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের পরবর্তি সভায় এসব ভূঁইফোড় সংগঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।

এমএসি/আরএইচ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়

Link copied