চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩, রাত ০২:২৩


দীর্ঘ প্রতীক্ষার চন্দ্র জয়ের ইতিহাসে নাম লেখালো ভারত। বুধবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে চাঁদের মাটিতে নেমেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর গতিপথ ধরে নেমে আসে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) জানিয়েছে, সফলভাবে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের বুকে অবতরণ করেছে। এটা নিয়ে চতুর্থ দেশ হিসেবে সফল ভাবে এই অভিযান সম্পন্ন করেছে।
 
বিক্রমের অবতরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর কমান্ড কক্ষে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন বিজ্ঞানীরা। তবে তাদের মাঝে ব্যাপক উৎকণ্ঠাও রয়েছে। বিক্রমের চূড়ান্ত পর্যায়ের এই অবতরণ প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে মোট ১৯ মিনিট। তারপরই তৈরি হয় এক নতুন ইতিহাস। 
 
চাঁদে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করানো দেশের তালিকায় চতুর্থ হিসেবে নাম লেখাল ভারত। এর আগে এই ইতিহাস গড়েছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন।
 
এর আগে, ভারতের চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডারটি চাঁদে নামার সময় বিধ্বস্ত হয়। সোমবার চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার মডিউল `বিক্রম` সফলভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে উত্তরসূরী চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারের সঙ্গে। চন্দ্রযান-২ বিধ্বস্ত হয়ে গেলেও এখনও তার অরবিটার পদক্ষিণ করছে চাঁদকে। আগের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তাই বিক্রমে অনেকগুলো অতি শক্তিশালী সেন্সর লাগানো হয়। এমনকি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেন্সর যদি কাজ নাও করে, তারপরেও ঠিকভাবে চাঁদে নামতে পারবে বিক্রম।
 
ইসরোর ওয়েবসাইটসহ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবের পেজে ৫টা ২০ মিনিট থেকে চাঁদে নামার সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে। কোটি ভারতীয়সহ বিশ্বের লাখো কোটি মানুষ উপভোগ করে এই মুহূর্তটি। এই মহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে স্কুলগুলোও এ সময় খোলা রাখা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন থেকেই চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে নামার দৃশ্যটি উপভোগ করেন। 
 
চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার মডিউলের দুইটি অংশ। ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান। বর্তমানে ডিবুস্টিং করে সঠিক অবতরণের স্থান নির্বাচনের কাজ চালাচ্ছে ল্যান্ডার। ইসরো জানিয়েছে, সোমবার চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার মডিউল এবং চন্দ্রযান-২-এর অরবিটারের (২০১৯ সালে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান) মধ্যে একটি দ্বিমুখী যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ‘স্বাগত, বন্ধু!’- এভাবেই চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডিং মডিউলকে স্বাগত জানায়। ফলে মিশন কন্ট্রোলের কাছে এখন ল্যান্ডিং মডিউলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের একাধিক মাধ্যম রয়েছে।
 
আগের বার মন ভেঙেছিল ভারতীয়দের। চন্দ্রযান-২-এর ল্যান্ডার সফলভাবে চন্দ্র পৃষ্ঠ স্পর্শ করতে পারেনি। ২.১ কিলোমিটারের কাছাকাছি উচ্চতায় এসে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের সেই রাত এখনও অনেকের স্মৃতিতে অটুট। এবারেও তাই ল্যান্ডিং নিয়ে বাড়তি উৎকণ্ঠা সকলের। সতর্ক ইসরোর বিজ্ঞানীরাও। সোমবার এএনআই-কে ইসরোর এক সিনিয়র বিজ্ঞানী বলেন, ‘যদি কোনও কারণ পরিস্থিতি প্রতিকূল বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে অবতরণ পিছিয়ে ২৭ আগস্ট করে দেওয়া হবে।
 
কয়েকদিন আগে রুশ চন্দ্রযান লুনা-২৫ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে। যেকোন রকমের বিপর্যয় এড়াতে ইসরো এবার অনেক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিক্রমের চাঁদে নামার মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হয়ে রইলেন কোটি কোটি মানুষ।
 
চাঁদে অবতরণের পর বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান তাদের কাজ সম্পাদন করতে সৌরশক্তি ব্যবহার করবে। তাই চন্দ্রযান যদি এমন সময়ে অবতরণ করে যখন চাঁদ অন্ধকারে ডুবে থাকবে, তা হলে এটি কাজ করবে না। তাই সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই ল্যান্ডার এবং রোভারটি চাঁদের বুকে নামাতে চেয়েছে ইসরো। চাঁদের এক মাস হয় পৃথিবীর হিসাবে ২৮ দিনে। এক চন্দ্রমাসে টানা ১৪ দিন রাত আর ১৪ দিন দিন থাকে। 
 
ইসরোর হিসাব অনুযায়ী, ২২ আগস্ট চাঁদে রাত শেষ হয়ে ২৩ আগস্ট থেকে টানা ১৪ দিন দক্ষিণ মেরুতে দিন থাকবে। ফলে সৌরশক্তি ব্যবহার করে নিজেদের কাজ চালাবে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। পাশাপাশি, ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে তারা। তাই এই সময়কেই অবতরণের জন্য বেছে নিয়েছে ইসরোর বিজ্ঞানীরা।

এমএসি/আরএইচ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়

Link copied