শীতের বৃষ্টিতে জনজীবন স্থবির

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪, বিকাল ০৭:১৫


শীতের মধ্যে বৃষ্টিতে গোপালগঞ্জ, বেনাপোল ও যশোরের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এসব অঞ্চলের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এই বৈরী আবহাওয়ায় কাজে যেতে না পারায় আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষ। বেনাপোল বন্দরেও পণ্য ওঠানামার স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

একই তো সূর্যের দেখা নেই; তার ওপর ঠান্ডা বাতাসে দুর্বিষহ দিন পার করছেন জেলার ছিন্নমূল মানুষরা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি শহর ঘুরে দেখেছেন তাদের দুর্দশা।

ত্রিনাথ বিশ্বাস নামের এক দিনমজুর বলেন, “ভোর থেকে বৃষ্টি আর ঠান্ডা বাতাস শীতের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাজে বের হয়েছি বেলা ১২টার পরে। সারাদিন কাজ করে, মাত্র ৪০০ টাকা পেয়েছি। এ টাকা দিয়ে সংসার চালানোর দায় হয়ে পড়েছে। এই শীত-বৃষ্টি না কমলে স্বস্তি নেই।”

শ্রমিক শরীয়ত হোসেন বলেন, “কয়েকদিন ধরে এমনেই প্রচণ্ড শীত পড়ছে, তারমধ্যে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টির সঙ্গে হিম শীতল বাতাসে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। কাজে বের হতে পারেনি। জেলা প্রশাসন থেকে যে কম্বল পেয়েছি, সেটা পেঁচিয়ে কোনোরকমে দির পার করছি।”

ছিন্নমূল হোসেন মোল্লা গ্রামে বাড়ি রেখে শহরে এসেছেন কাজের সন্ধানে। কোথাও থাকার জায়গা না মেলায় ঠাঁই হয়েছে ফুটপাতে, রাস্তার ধারে পার্কে। কিন্তু প্রচণ্ড শীত আর বৃষ্টি এসব জায়গায় এখন আর থাকা যাচ্ছে না বলে জানালেন।

হোসেন বলেন, “আমার কাছে তেমন গরম কাপড় নাই। খুব কষ্ট হচ্ছে।”

বৃষ্টির পর উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা স্বাভাবিককাজ করতে পারছেন না।পণ্য উঠানামার স্বাভাবিক কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন-৯২৫ এর সভাপতি রাজু আহম্মেদ রাজু বলেন, “একই তো ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা; এর মধ্যে সকাল থেকে বৃষ্টির হওয়ার কারণে শ্রমিকরা কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না।”

বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন-৮৯১ এর সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, “সপ্তাহখানেক ধরেই তো হাড়কাঁপানো শীত। এরমধ্যে ভোর থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এর মধ্যেই হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা কষ্ট করে বন্দরে এসেছে কিন্তু শেডে স্বাভাবিক কাজ করতে পারছে না।”

বারোপোতা গ্রামের বন্দর শ্রমিক আব্দুস সেলিম বলেন, “ঘর থেকে বের হতেই পারছি না। যদিও হচ্ছি কাজের জন্য। কোনো কাজই ঠিকমতো করতে পারছি না।'

হ্যান্ডেলিং শ্রমিক রবিউল ইসলাম বলেন, “উত্তরের কনকনে হাওয়া বইছে, সূর্যেরও দেখা মিলছে না। দুপুরের দিকে সূর্য উঠলেও তেজ থাকছে না। ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসে। সবমিলিয়ে বন্দরে স্বাভাবিক কাজ করতে পারছি না।”

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজি বলেন, “ঘন কুয়াশার কারণে দুপুরেও অন্ধকার থাকছে রাস্তাঘাট। দুর্ঘটনা এড়াতে ধীরগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সময়মত রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। প্রচণ্ড শীতে আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল ইসলাম বলেন, “বন্দরে পণ্যজট কমাতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রচণ্ড শৈত্য প্রবাহের কারণে বন্দর ভিতরে বা ওপেন ইয়ার্ডে হ্যান্ডেলিং শ্রমিকরা কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।”

এদিকে ঠান্ডার কারণে রাস্তায় লোকজন কম বের হতে দেখা গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি কম চোখে পড়েছে।

মাঘের এই বৃষ্টিতে বোরো আবাদের জন্য আশীর্বাদ হলেও সরিষার জন্য ক্ষতি বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার।

তিনি বলেন, “বৃষ্টিতে সরিষার ফুল ঝরে যায়। বৃষ্টি যদি একাধিক দিন স্থায়ী হয় তবে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে সরিষার আবাদে। এছাড়া এ বৃষ্টি ক্ষতি আলুর জন্যও।”

এমএসি/আরএইচ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়

Link copied